ধানমণ্ডির জাহাজ বাড়ি: ইতিহাস, রহস্য এবং ভাঙনের গল্প
ধানমণ্ডির লেকপাড়ের পরিচিত দৃশ্য ছিল এক ব্যতিক্রমধর্মী স্থাপত্য — ‘জাহাজ বাড়ি’। জাহাজের মতো দেখতে এই বাড়িটি একসময় দর্শনার্থীদের কৌতূহল আর মুগ্ধতার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটি হারিয়ে গেছে কেবল স্মৃতির পাতায়। কেন এই বাড়ি ভেঙে ফেলা হলো? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
ভেঙে ফেলার প্রধান কারণ
বহুতল ভবন নির্মাণ পরিকল্পনা:
জাহাজ বাড়ির বর্তমান মালিকপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন সেখানে আধুনিক বহুতল ভবন নির্মাণের। ভবিষ্যতে সেখানে আবাসিক ফ্ল্যাট, রেস্টুরেন্ট, সুইমিং পুলসহ নানা সুবিধাযুক্ত একটি আধুনিক কমপ্লেক্স গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
ব্যক্তিগত মালিকানা ও উন্নয়ন:
১৫.৮১ কাঠার এই জমি ও স্থাপনাটি ছিল সম্পূর্ণ ব্যক্তি মালিকানাধীন। মালিকের নিজস্ব উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই ভবনটি ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সরকারি কোনো সরাসরি হস্তক্ষেপ না থাকায় এটি সহজেই কার্যকর হয়।
বাড়িটির ইতিহাস ও রহস্য
নাম ও গঠন:
মূল নাম ছিল "চিশতিয়া প্যালেস"। তবে এর অনন্য নকশা — যা একটি বিশাল জাহাজের মতো দেখতে ছিল — এর জনপ্রিয় নাম "জাহাজ বাড়ি" হয়ে দাঁড়ায়। ভবনটির সম্মুখভাগে নৌকার নকশা এবং পেছনে ঐতিহ্যবাহী মন্দিরের ছাদ আকৃতির অবকাঠামো ছিল, যা দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করত।
মালিকের পরিচয়:
বাড়িটির মালিক ছিলেন প্রয়াত একেএম আনোয়ারুল হক চৌধুরী (শের এ খাজা), যিনি ছিলেন একজন আধ্যাত্মিক নেতা এবং চিশতিয়া গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা। তার ধর্মীয় অনুরাগ এবং নকশার অভিনব চিন্তাধারা এই বাড়ির স্থাপত্যে প্রতিফলিত হয়েছিল।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
জাহাজ বাড়ি ভেঙে ফেলার খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানান প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অনেকেই দুঃখ প্রকাশ করেন এবং এমন একটি বৈচিত্র্যময় স্থাপত্য সংরক্ষণের দাবিও তোলেন। অনেকেই মনে করেন, রাজধানীতে এমন ইউনিক স্থাপত্য খুব কমই ছিল, এবং এটি ধ্বংস হওয়ায় শহর হারিয়েছে তার একটি বিশেষ চিহ্ন।
অতীতের স্মৃতি
ধানমণ্ডি লেকে হাঁটতে বের হওয়া মানুষেরা একসময় জাহাজ বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতেন, গল্প করতেন। বাড়িটির রহস্যময় নকশা এবং পরিবেশ এক অদ্ভুত মোহ তৈরি করত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটি কেবল ধোঁয়াটে স্মৃতিতে রয়ে গেছে।
© collected
0 Comments